কীভাবে ওজন কমানো যায় - ওজন কমানোর ব্যায়াম

আমরা অনেকেই জানিনা কীভাবে ওজন কমানো যায়। খাবার না খেলে যে ওজন কমে এটা সবার ভুল ধারনা। ওজন কমানো খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আমরা চেষ্টা করলেই ওজন কমাতে পারি। বেশ কিছু নিয়ন মেনে চললে খুব সহজেই ওজন কমানো যায়। ওজন কমানোর ক্ষেএে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে ডায়েট এবং ব্যায়াম। এ দুটো বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রেখেই খুব দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব।

কীভাবে ওজন কমানো যায়

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো,ডায়েট এবং ব্যায়াম করে দ্রুত কীভাকে ওজন কমানো যায়।

দ্রুত শরীরের ওজন কীভাবে কমাবো

ব্যায়াম ও ডায়েটের মাধ্যমে দ্রুত ওজন কমানো যায়। এজন্য আমাদের যা করা জরুরি তা হলো খাবারের তালিকায় পরিবর্তন। খাবার একবারেই খাওয়া চলবেনা এটা না। কম ক্যালোরি য্ক্তু খাবার , খাবারের তালিকায় থাকতে হবে। বাদ দিতে হবে চর্বিযুক্ত খাবার। সুতরাং ডায়েট প্ল্যান এবং পাশাপাশি ব্যায়াম করলেই দ্রুত শরীরের ওজন কমানো যায়।

সকালে কী খাবার খেলে ওজন কমে

শরীরের দ্রুত ওজন কমাতে সকালের খাবার নিয়ন্ত্রন রাখা জরুরি। শরীর ফিট রাখতে কে না চায়। এর জন্যে খেয়াল রাখতে হবে প্রতিদিন আমরা কী খাবার এবং কীভাবে খাচ্ছি। যেসব খাবার ওজন বাড়ায় সেই খাবারগুলো পরিহার করতে হবে। কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে শরীরে চর্বি বাঁধে।যে খাবার গুলো দেহে চর্বি বাঁধেনা সেসব খাবার খেতে হবে। পেটের মেদ কমায় যে খাবারগুলো সে সম্পর্কে যদি আমরা যেনে থাকি তাহলে খুব সহজেই ওজন কমানো সম্ভব হবে।

বেশ কিছু পানীয় আছে যেগুলো খেলে ওজন অনেকটাই কমায় বলে ধারনা করা হয়। অতিরিক্ত ক্যালোরি সমৃদ্ধ এবং প্রচুর পরিমাণে যে খাবারগুলোতে কার্বোহাইড্রেট আছে সেই খাবারগুলো পরিহার করতে হবে। তাহলে চলুন জানা যাক কোন কোন খাবারে বাধবেনা চর্বি এবং কমবে ওজন।

প্রথমেই আসি লেবু এবং পানি। লেবুতে অল্প পরিমাণে ক্যালোরি রয়েছে । ক্যালোরি কম থাকায় এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনাকে যা করতে হবে,প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে পান করা। গ্রিন টি ওজন কমাতে খুবই উপকারি একটি পানীয়। আরও খেতে হবে কাঠবাদাম। কাঠবাদাম খেলে খুধার পরিমাণ কমে যায় ফলে এটি ওজন কমায়। 

ডিম: ডিমে ক্যালোরি এবং ফ্যাট কম থাকে যা ওজন কমায়। 

চিনি ছাড়া চা: সকালে যদি চা কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে চিনি ছাড়া চা খাওয়ার অভ্যাস করুন। চিনিতে প্রচুর ক্যালোরি থাকে তাই চিনিয্ক্তু খাবার পরিহার করতে হবে।

রুটি: আটার রুটিতে প্রচুর ফাইবার থাকে। যা দ্রুত ওজন কমায়।

এছারাও পেয়ারা, আপেল, প্রোটিনযুক্ত খাবার সকালের খাবারের তালিকায় থাকলে আশা করি ওজন অনেকটাই কমবে।

রাতে কী খাবার খেলে ওজন কমবে

আমরা অনেকেই মনে করে থাকি ওজন কমানোর জন্যে রাতে একবারেই খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। এটা যারা মনে করেন তা ভূল ধারনা। তবে রাতে অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত এবং ভারি খাবার খাওয়া চলবেনা। হালকা খাবার খেতে হবে। ওজন কমানোর জন্য রাতের খাবারে রাখতে পারেন কলা। কলা খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভর্তি রাখে। ফলে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা অনেকটাই কমে যায়। অ্যামন্ড  বাদামে ক্যালরির মান কম যা ওজন কমায়। পিনার বাটার গভীর রাতে খেলেও সমস্যা হবেনা বরং ওজন কমাবে। দই খেলেও ওজন কমে। তবে মিষ্টি দই না,টক দই খেতে হবে। 

যদি আপনি দ্রুত ওজন কমাতে চান তাহলে রাতে ভাত ও রুটি বন্ধ করুন। ভাত রুটির পরিবর্তে আপনি ছোট এক বাটি সবজি খাবেন। সবজির মধ্যে আপনি মটরশুঁটি,সিমের বিচি,বরবটির বিচি খাবেন। এই খাবারগুলোর মধ্যে এমন এক ধরনের ফাইবার থাকে যা খেলে সহজে খুধা লাগবেনা। বেশি রাতে খিদা লাগলে ভেজানো চিয়া সিড রাতের বেলায় খান। এসকল খাবারগুলো রাতের খাবারে রাখলে আপনি আপনার কাঙ্খিত ওজন ফিরে পাবেন অবশ্যই।

আরো পড়ুন: স্থায়ীভাবে শ্যামলা ত্বক ফরসা করার উপায়

মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেএে ডায়েট চার্টে যে খাবারগুলো থাকা জরুরি তা আমরা আলোচনা করে আপনাদের জানাব। মেয়েদের ওজন কমানোর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য টিপসগুলির মধ্যে অন্যতম হলো প্রচুর পানি পান করা। পানি  শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি দূর করে। বিশেষ করে খাবারের আগে পানি খাওয়া জরুরি। ব্লাক কফি খেলে দ্রুত ওজন কমায়। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন এবং প্রতিদিন সকালে লেবু পানি খান। এর ফলে মেদ কমে ওজন হ্রাস পায়। আঁশযুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি ওজন কমায়। টমেটো, শঁসা এসব সবজি স্যালাড বানিয়ে খান। কার্বোহাইড্রেডযুক্ত খাবার একেবারেই খাবেন না। তবে আমাদের দেশের মেয়েরা ভাত অনেক পছন্দ করেন। তাই শুধু দুপুরে অল্প করে হাফ বাটি ভাত খাবেন। অনান্য সময়ে খিদে পেলে ফল খাবেন। ফলের মধ্যে আপেলে মিষ্টি কম থাকে ,তাই আপেল খাবেন। বাইরের তৈরি খাবার খাওয়া যাবেনা। তেলে ভাজা খাবার খাওয়া চলবেনা। দুর্বলতা কাটাতে মাঝে মধ্যে কলা খাবেন। ঊপরে বলা ডায়েট চার্টটি মেয়েরা ফলো করলে অবশ্যই ওজন কমবে।

ওজন কমাতে দিনে কত ক্যালোরি খেতে হবে

ক্যালোরি হলো শক্তির উৎস। সব খাবারেই ক্যালোরি থাকে শুধু সেটা কম অথবা বেশি। এই ক্যালোরি নারী , পুরুষ ,শিশু ,উচ্চতা , শারিরিক সুস্থতা ,বিভিন্ন কারনের উপর নির্ভর করে। ক্যালোরি আপনার শরীরে প্রয়োজনীয়তার থেকে  বেশি গ্রহন করলে সেই অতিরিক্ত ক্যালোরি দেহে চর্বি জমায় ফলে আপনার ওজন বেড়ে যায়। তাহলে জানা যাক প্রতিদিন কত ক্যালোরি খেতে হবে। 

নারীদের জন্য: ২৬-৫০ বছরের মহিলাদের প্রায় ২০০০ ক্যালোরি । পরিশ্রমকারী মহিলাদের জন্য একটু বেশি ক্যালোরির মান হতে হবে অন্তত ২২০০ ক্যালোরি । ৫০ বছরের মহিলাদের প্রায় ১,৮০০ ক্যালোরি দৈনিক প্রয়োজন।

পুরুষের জন্য: ২৬-৪৫ বছরের পুরুষদের দৈনিক ২,৬০০ ক্যালোরি। কর্মঠো পুরুষদের ৩০০০ ক্যালোরি। ১৯-২৫ বছরের পুরুষদের ২,৮০০ ক্যালোরি। ৪৬-৬৫ বছরের পুরুষদের ২,৪০০ ক্যালোরি।৬৫ বছরের পুরুষদের আনুমানিক ২,০০০ ক্যালোরি।

শিশুদের জন্যে: শিশুদের জন্যে ক্যালোরির মান ১২০০ থেকে ১৪০০ ক্যালোরি। বয়সভেদে ক্যালোরির মান নির্ধারণ করা হয়। ক্যালোরি বিবেচনা করে প্রতিদিন খাবার খেতে হবে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় ৫০০ ক্যালোরি  কম খেলে ওজন কমবে বলে ধারনা করা হয়। 

ওজন কমাতে সপ্তাহে কতদিন ব্যায়াম করা উচিত

ওজন কমাতে ব্যায়াম করা একটি গুরত্বপূর্ন বিষয়। ওজন কমাতে প্রচুর পরিমানে শারিরিক ও মানসিক পরিশ্রম করতে হবে। ওজন কমাতে কতদিন ব্যায়াম করতে হবে তার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেয়। তবে কমপক্ষে সপ্তাহে ৩-৪ দিন অবশ্যই ব্যায়াম করতে হবে। আপনি প্রতিদিন সময় করে ব্যায়াম করবেন। সকালের ব্যায়াম সবথেকে বেশি কার্যকরি। ভোর ৫ টা থেকে ৮ টার মধ্যে সেটা করতে হবে। তবে বিকেলেও করা যায়। যে ব্যায়ামগুলো আপনি করবেন জোরে হাঁটা, দৌড়ানো,সাইকেল চালনো,সাঁতার এগুলে। এছারাও যে ব্যায়ামগুলো করলে মেদ কমে সেগুলো করতে হবে যেমনঃ সিট আপ,লেগ রেস ইত্যাদি। বিনোদনের মাধ্যমেও ব্যায়াম হয়ে থাকে। খেলাধুলা, নাচানাচি করেও ওজন কমে।

আরো পড়ুন: মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - মধু খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিন কত ঘন্টা ব্যায়াম করা উচিত

ব্যায়াম যে শুধু ওজন কমায় তা না,ব্যায়াম সুস্থ থাকতেও অপরিহার্য। ওজন কমানোর জন্যে অবশ্যই ব্যায়াম করতে হবে। সকল বয়সের ক্ষেএে এক সময় ধরনের ব্যায়াম করা চলবেনা। আপনি কী ধরনের ব্যায়াম করছেন,সেটার ওপর সময় নির্ধারন করতে হবে। স্স্থু থাকতে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেই যথেষ্ট। তবে ওজন কমাতে একটু বেশি সময় ধরে ব্যায়াম করতে হবে। ওজন কমানোর জন্যে আপনাকে অবশ্যই প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যায়াম করতে হবে। চেষ্টা করবেন কমপক্ষে যেন ৯০ মিনিট হয়।ওজন কমানোয জন্য আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। মনোবল ঠিক রাখতে হবে যে অবশ্যই আমি ওজন কমাবো। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যায়াম করবেন না। অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরকে অসুস্থ করে ফেলে। আপনি কাজের ফাঁকে সময় করে ব্যায়ামগুলো করবেন। প্রতিদিনই ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাহলে দ্রুত আপনার ওজন কমবে।

স্বাস্থসম্মত উপায়ে ওজন কমানোর উপায়

ওজন কমানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা তুলে ধরেছি। তবে স¦াস্থের জন্যে যে বিষয়গুলো ক্ষতিকর সেসব বিষয়গুলো পরিহার করতে হবে। শরীরকে সুস্থ রাখতে সবকিছু পরিমান মতো হতে হবে। সঠিক খাবার,পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম। ওজন কমানোর কথা চিন্তা করে এমন কোনো অভ্যাস গড়বনা যাতে শরীরকে অসুস্থ করে ফেলে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবারগুলো সঠিকভাবে খেতে হবে। কম ক্যালোরি যুক্ত ফল, সবজি খেতে হবে। অ্যালকোহল , চিনিযুক্ত খাবার ,চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। আরেকটা বিষয় মানতে পারলে ভালো সেটি হলো লাল মাংস। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন নিয়মিত হাত ধুবেন যা স্বাস্থের জন্যে উপকারি। নিয়মিত স্বাস্থ পরীক্ষা করবেন। চিকৎসকের পরামর্শ নিবেন এতে শরীর ঠিক থাকবে। ধুমপান থেকে বিরত থাকুন,এটি আপনার শরীরকে ভেতর থেকে অকেজো করে ফেলে। ওজন কমানোর জন্যে বিভিন্ন ধরনের মেডিশিন পাওয়া যায়। তবে এটি কার্যকর নয়। কারন এটি শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

পরিশেষে বলতে পারি নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক সময়ে সঠিক খাবার দেহের জন্যে যেমন স্বাস্থসম্মত ঠিক তেমনি ওজন কমাতে দ্রুত কাজ করে। তাই স্বাস্থসম্মত উপায় অবলম্বন করে ওজন কমানোর চেষ্টা করবো।

লেখকের শেষ বক্তব্য

কীভাবে ওজন কমানো যায় - ওজন কমানোর ব্যায়াম সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি কীভাবে ওজন কমানো যায় - ওজন কমানোর ব্যায়াম সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url