কীভাবে আল্লাহর প্রিয় হবো - আল্লাহর প্রিয় বান্দা কারা

আজকের আর্টিকেলের বিষয় হচ্ছে কীভাবে আল্লাহর প্রিয় হবো-আল্লাহর প্রিয় বান্দা কারা। আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে প্রথমেই আল্লাহ ও নবী রাসূলগণকে বিশ্বাস করতে হবে। দুনিয়ার জীবনে খারাপ কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূলের দেখানো পথ অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা করতে হবে। আল্লাহ যা পছন্দ করেন সেগুলো করতে হবে এবং যা পছন্দ করেন না তা বর্জন করতে হবে।  মুসলিম জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব হলো আল কুরআন। এই কিতাব এবং হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সুন্নাহ মেনে চললে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারবো। 

কীভাবে আল্লাহর প্রিয় হবো

আল্লাহর কাছে প্রিয় হবার আমল

যেসকল আচরণ আল্লাহর কাছে প্রিয় সেসকল অভ্যাসগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে। যে আমলগুলো বান্দা আল্ল্হর ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে নিয়মিত করে সেই বান্দা  আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। আল্লাহর প্রিয় আমলগুলোর মধ্যে অধিক হারে জিকির করা পছন্দের একটি আমল। সর্বদা সত্য কথা বলা,ন্যায় অন্যায় ভেবে কথা বলা। আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্যে যেসব গুনাবলি থাকতে হবে- নম্র ও ভদ্রতার সহিত কথা বলা, বিতর্ক পরিত্যাগ করা, কিয়ামুল লাইল আদায়, জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রার্থনা, শিরক পরিত্যাগ, যিনা না করা, মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া। এসব বিষয় আমরা ছোট চোখে দেখলেও, এগুলো পরিহার না করলে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যায় না।

সঠিক ভাবে সঠিক সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত ,নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়া,রমজান মাসের রজা করা, যাকাত দেওয়া,হজ্জ পালন,গরীবদুঃখীদের সাহায্য করা,মানুষের উপকার করা ,উপকার করে খোটা না দেওয়া, বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা এসকল কাজ আল্লাহর কাছে প্রিয়। বান্দার যে কাজগুলো দেখে আল্লাহ তায়ালা হাসেন, একটি হলো যে ব্যাক্তি কনকনে শীতের রাতে আরামের বিছানা ছেড়ে দিয়ে ওজু করে সালাত আদায় করে। ওপর আরেকটি কাজ হলো আল্লাহর রাস্তায় যে ব্যাক্তি জান্নাত লাভের আশায় এবং জান্নাত লাভের আশায় জিহাদ করতে যান। আল্লাহ তায়ালা সকল বান্দাকে ভালোবাসেন তবে মুমিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ বেশি খুশি হন। নবীজির প্রতি পূর্ন ভালোবাসা হলো মুমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট। আর নবীজির সুন্নত যথাযথ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়া যায়।

নবীজি বলেছেন হে মুমিনগণ তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও তাহলে আমার দেখানো পথ অনুসরণ করো। নফল ইবাদতে মনোযোগি হলেও আল্লাহর প্রিয় হওয়া যায়। ইসলামি বিধি বিধানগুলো সঠিকভাবে মানতে হবে। নবীজি স. বলেছেন-আল্লাহ তায়ালা বলেন,যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে সেসব লোকের জন্য আমার ভালোবাসা ওয়াজিব হয়ে যায়। ভালো কিংবা খারাপ  সময়ে সকল ক্ষেএে আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করতে হবে। উপরিক্ত আমলগুলো করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়া যায়।

কী করলে দোয়া কবুল হয়

আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়ার জন্যে আমরা অনেক জিকির ,তওবা,তাসবিহ পাঠ করে থাকি। তবে কী করলে দুয়া কবুল হয় তা আমাদের জানা দরকার। বান্দার চোখের পানি আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। চোখের পানি ছেড়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। কিছু সময় আছে যে সময়ে আল্লাহ দুয়া কবুল করে। ফরজ নামাজের পর ও রাতের শেষ অংশে দোয়া কবুল হয় । বান্দা যখন সেজদা দেয় আল্লাহ খুশি হন সেই সময়েও দোয়া কবুল হয়। আজানর সময় দোয়া করলে  কবুল হয়। আল্লাহ যখন দুনিয়াতে রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করে,সেই বৃষ্টির পানি হাতে কোনো মুমিন ব্যক্তি কিছু  চাইলে আল্লাহ তাকে ফেরান না।

জুম্মার দিন আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয় এই দিন দোয়া করলে কবুল হয়। বুখারিতে এসেছে জুম্মার দিন দোয়া কবুল হয়। আল্লাহর গুনবাচাক নাম ধরে আল্লাহকে ডেকে দোয়া করলে কবুল হয়। ফরজ নামাজের মোনাজাতে দোয়া করা ভালো সময়। দোয়া করলেই দোয়া কবুল হবে না। দোয়া কবুল করতে প্রথমেই ভালো করে ওজু করে,প্রথমেই হাত তুলে আল্লাহর প্রসংসা করব এরপর  দুরূদ পড়ব তারপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইবো । মোনাজাতে অবশ্যই আপনি দুরূদ পড়বেন,কারন দুরূদ না পড়লে আপনার দোয়া আসমানে ঝুলে থেকে যায়। আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। তাই দোয়া করার সময়  অবশ্যই দুরূদ পড়ব। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হলে অবশ্যই বেশি বেশি দোয়া করতে হবে।

আরো পড়ুন: মহিলাদের হজ করার শর্ত - মহিলাদের ওমরা পালনের নিয়ম

কারা আল্লাহর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করবে

মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব করে আল্লাহ তায়ালা তার ইবাদত বন্দেগি  করার জন্যে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন । মানুষ আল্লাহর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করবে। খিলাফত হলো ইসলামিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার নাম। কুরআন ও সুন্নাহ মেনে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এটি মুসলমানদের জন্য আল্লহর দেয়া রাষ্ট্র ব্যবস্থার নাম। ইসলামিক পন্থা অবলম্বন করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চালু করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন ইসলামিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা হবে সবসময় সত্যের পথে। থাকবেনা কোনো প্রকার দূর্নিতী,ব্যভিচার,মারামারি,কাটাকাটি থাকবেনা কোনো রকমের অন্যায়।

ইসলাম যেমন শান্তির ধর্ম। ঠিক তেমনি ইসলামিক পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করলে দেশে শান্তি বজায় থাকবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় নেতা নির্বাচন করতে হবে। তার মধ্যে কুরআন ও সুন্নাহর ঞ্জান থাকা জরুরি। ইসলামের চার খলিফার চারিত্রিক বৈশিষ্ট তার মধ্যে থাকতে হবে। মুসলিম জাতিকে আল্লাহ তায়ালা এ ব্যবস্থাকে কঠোরভাবে মানতে বলেছেন। মানুষকেই আল্লাহ তায়ালা খিলাফতের দায়িত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ ও নবী রাসূলগণের দেখানো পথ অবলম্বন করে মানুষকে খিলাফতের দায়িত্ব পালন করতে হবে। একজন মুমিন ব্যক্তির দায়িত্ব ইসলামিক উপায়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা এবং ইসলামিক দাওয়াত দিয়ে খিলাফত সম্পর্কে বোঝানো। সকল মুসলিম জাতিকে একত্রিত হয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুষ্ঠভাবে খিলাফতের দায়িত¦ পালন করলে আল্লাহর প্রিয় হওয়া যায়।

আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্ত বান্দা কারা

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়াতে মানুষ যে সুখবর পায় তাই আল্লাহর নেয়ামত। আমরা সবাই আল্লাহর নেয়ামতের আশায় থাকি। আল্লাহর নেয়ামত পাওয়ার জন্যে আল্লাত যা নির্দেশ দিয়েছেন তা মেনে চলতে হবে। আল্লাহর অসংখ্যা নেয়ামত রয়েছে যা গুনে শেষ করা যাবেনা। এ পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তায়ালা যা সৃষ্টি করেছেন যা মানুষকে দিয়েছেন সবই আল্লাহর নেয়ামত। আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের শেষ নেয়। তিনি বান্দাকে বিভিন্নভাবে নেয়ামত দিয়ে থাকেন। সুরা ফুরকানে আল্লাহ তায়ালা প্রিয় বান্দার গুনাবলি তুলে ধরেছেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চাইলে সেই গুনাবলি থাকা দরকার। 

আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্ত বান্দা তারা যারা আল্লাহর কাছে প্রিয় । আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ স. এর মতো এত বেশি আমল কেউ করেনি। বিশ্বনবী যেভাবে আল্লাহর ইবাদত করে গেছেন সেভাবে আমাদের ইবাদত করতে হবে। বিশ্বনবীর সুন্নাহ ও আল্লাহর কিতাব  এ দুটো জিনিস যদি আমরা মানতে পারি তাহলে আমরা কখনও পথভ্রষ্ঠ হবো না। মানুষের জন্য একটি বড় নেয়ামত হলো মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ তার বান্দাকে অনেক ভালোবাসেন। তিনি বিভিন্ন ভাবে বান্দার পরীক্ষা নেন। ধৈর্য সহকারে আল্লাহর পথে অবিচল থাকলে আল্লাহর নেয়ামত আমরা লাভ করতে পারব। আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্ত বান্দা সবসময় আল্লাহকে স্মরন করে। আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে। সৌভাগ্যবান ব্যক্তিতো সেই যে আল্লাহর কাছে প্রিয় এবং আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্ত।

আল্লাহর প্রিয় সূরা

মুসলিম জাতির শ্রেষ্ঠ কিতাব আল-কুরআন। কুরআন মাজীদে অনেক সূরা আল্লাহ তায়ালা মানুষের পথ পদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন। সকল সূরায় মানুষের হেদায়েতের বাহক। কোরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা মোট ১১৪ টি সূরা নাযিল করেছেন। এই ১১৪ টি সূরায় আল্লাহর কাছে প্রিয়। তবে আল্লাহর কাছে সবথেকে প্রিয় সূরা আর-রহমান। আর-রহমান সূরা যেমন আল্লাহর কাছে প্রিয় তেমনি রহমান নামটি আল্লাহর খুব পছন্দের।  সূরায়  এই নামটি   তিনি একত্রিশ বার ব্যবহার করেছেন।

কোরআনের সৌন্দর্য হলো রহমান সূরা। এই সূরা নিয়মিত পড়লে চেহারা সুন্দর হবে। এই সূরায় অনেক ফযিলত রয়েছে। স্বপ্নে এ সূরা পাঠ করলে তার জন্যে হজ্জ নসীব হয়ে যাবে। আরোগ্য ব্যক্তির রোগ ভালো হবে। যে বাবা - মা নিয়মিত এ সূরা পাঠ করবে তাদের সন্তান বাবা মায়ের কথা শুনবে। এই সূরা পাঠ করলে দোযখের দরজা বন্ধ হয়, বেহেশতের দরজা খুলে যায়। দুনিয়াতে রুজি বৃদ্ধি পাবে। এই সূরা মহান আল্লাহর কাছে এতই প্রিয় যে , কিয়ামতের দিন তিনি নিজেই বান্দাদের পাঠ করে শুনাবেন।

আরো পড়ুন: কত টাকা থাকলে কুরবানি ওয়াজিব - কুরবানির সুন্নত সমূহ

আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলে কী হয়

একজন মুমিন ব্যক্তির সর্বোত্তম বৈশিষ্ট হলো সুখে দুঃখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়। শুকরিয়া আদায় করা ব্যক্তি কখনো  ভুল পথে যাবেনা। আল্লাহর ভালোবাসা সব সময় তার পাশে থাকে। মহান আল্লাহ তায়ালা মুমিন ব্যক্তিকে দুঃখ দিয়ে পরীক্ষা করে। সে সময় হতাশ না হয়ে ধৈর্যের সহিত শুকরিয়া আদায় করা। সূরা ইবরাহিমের ৭নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-যদি তোমরা কৃতঙ্গতা প্রকাশ করো তবে আমি তোমাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দিব। আর যদি তোমরা অকৃতঙ্গত হও নিশ্চয় আমার শাস্তি ভয়াভহ। কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করবেন। শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়া যায় এবং আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়।

উপরের আলোচনা পড়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারবো কীভাবে আল্লাহর প্রিয় হবো-আল্লাহর প্রিয় বান্দা কারা। 

লেখকের শেষ বক্তব্য

কীভাবে আল্লাহর প্রিয় হবো - আল্লাহর প্রিয় বান্দা কারা সে সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি কীভাবে আল্লাহর প্রিয় হবো - আল্লাহর প্রিয় বান্দা কারা সে সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।



পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
comment url