রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার - রাজশাহীর বিখ্যাত মিষ্টি
রাজশাহী শহরকে বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে সুন্দর শহর বলা হয়। নির্মল বাতাস, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগর খ্যাত রাজশাহীকে ফুলের নগরীও বলা হচ্ছে। পুরো শহর যেন অপরূপ রূপে সাজানো। আরও রয়েছে রাতের বর্নিল আলো, দর্শনীয় স্থান, সারি সারি ফুলের গাছ। আপনারা অনেকেই রাজশাহী শহর সম্পর্কে জানতে চান। তাই সৌন্দর্যের এই শহরকে নিয়ে আজকের আর্টিকেল। এই আর্টিকেলে আপনাদের সামনে রাজশাহী বিষয়ে সকল তথ্য এবং রাজশাহীর বিখ্যাত থাবার ও বিখ্যাত মিষ্টি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে রাজশাহী শহর সম্পর্কে জেনে নিন।
রাজশাহী সম্পর্কে তথ্য
রাজশাহী বিভাগ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশের শহরগুলো মধ্যে রাজশাহীকে সবচেয়ে কম বায়ু দূষনের শহরও বলা হয়। এই শহরটি পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। এই শহরটি নাম রামপুর-বোয়ালিয়া থেকে উদ্ভব হয়েছে। এ শহরের আয়তন ১৮,১৫৪ বর্গ কি.মি , এই বিভাগের জেলা ৮ টি, উপজেলা ৬৬ টি এবং ইউনিয়ন রয়েছে ৫৬৪ টি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর রাজশাহী বিভাগকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। রাজশাহী বিভাগের ৮ টি জেলার নাম হলো ঃ নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী। রাজশাহী জেলার উপজেলা ৯ টি হলো বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া, বাগমারা, দুর্গাপুর, মোহনপুর, তানোর, পবা এবং গোদাগাড়ি উপজেলা। রাজশাহী জেলার সবথেকে বড় উপজেলা হলো বাগমাড়া । একদিকে রাজশাহীর প্রশাসনিক ব্যবস্থা অপরদিকে অধিবাসিদের সচেতনতার কারনেই এই শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।
রাজশাহীকে শিক্ষার নগরীও বলা হয়। রাজশাহী শহরে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাজশাহী সরকারি বিশ্ববিদ্যায়, রাজশাহী বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়, স্বাস্থ বিষয়ক সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য বিষয়ক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান, সাধারন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষন একাডেমি। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর যেমন রয়েছে বাহ্যিক সৌন্দর্য তেমনি রয়েছে শৃঙ্খলা ও শিক্ষাব্যবস্থাপনার সুন্দর ব্যবস্থা।
রাজশাহী এলাকার মানুষের জীবন আবর্তিত হয় মূলত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে পদ্মা নদী, আম, রেশম শিল্প। মধ্যবিত্তরা আম, লিচু ফলন করেও কর্মসংস্থান তৈরি করছে। প্রানের এই শহরে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান । সেগুলো মধ্যে রয়েছে-
পর্দা গার্ডেন: রাজশাহী শহরে পদ্মা নদীর পাশে রয়েছে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, মনোরোম স্থান।
লালন শাহ মুক্ত মঞ্চ: পদ্মা নদীর তীরে রয়েছে এই মুক্ত মঞ্চটি। প্রকৃতির খোলামেলা বাতাস উপভোগ করতে ভির জমায় অনেকেই।
টি-বাঁধ ও আই বাঁধ: রানজশাহী শহরের শান্ত, স্নিদ্ধ, অপরুপ জায়গা হলো এই দুটি বাঁধ। দুই বাঁধের সারি সারি গাছ নিমিষেই মুগ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো।
রাজশাহী কলেজ: রাজশাহী কলেজের সৌন্দয্যে মুগ্ধ হয় না এমন মানুষ খুব কম রয়েছে। গাঢ় লাল রঙে তৈরি এ কলেজ ও অপরুপভাবে সাজানো কলেজের ক্যামপাস দেখতে দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ।
রাজশহী চিড়িয়াখানা: রাজশাহী শহরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হলো রাজশাহী চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক ও বলা যায়। এটা প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
শহীদ জিয়া শিশু পার্ক: রাজশাহীর নওদা পাড়ায় এ পার্কের অবস্থান। এ পার্কে বিশেষ সৌন্দর্য হলো দীঘির মাঝখানে কৃত্রিম পাহাড়। বিভিন্ন জায়গার মানুষ এই পার্কটিতে ঘুরতে আসে।
আরও রয়েছে ওয়াটার পার্ক, প্যারিস রোড, সবুজ সিএন্ডিবি রাস্তা,বাঘা মসজিদ, পুঠিয়ার রাজবাড়ি, সাফিনা পার্ক, ইত্যাদি। মন খারাপ থাকলে, মনে প্রশান্তি এনে দেই এ শহরের বিভিন্ন স্থান।
রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার
রাজশাহী শহরকে সৌন্দর্যের রাজধানী বলা হয়ে থাকে। সৌন্দর্যের পাশাপাশি এ শহরের খাবারও বিভিন্ন জায়গার মানুষকে আকৃষ্ট করে। রাজশাহী ঘুরতে আসবেন, খাবার না থাকলে চলে? পেয়ে যাবেন বিভিন্ন মজাদার স্বাদের খাবার প্রানের শহর এই রাজশাহীতে। রাজশাহী জেলায় বেশ কিছু বিখ্যাত খাবার আছে যেগুলো সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোচনা করবো।
কালাই রুটি: রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কালাইয়ের রুটি। চালের আটার সাথে মাসকলাএর আটার মিশ্রনে এ রুটি তৈরি করা হয়। কালায়ের রুটির সাথে বেগুন ভর্তা, শুকনো মরিচের ভর্তা, বট, মাংস ভুনা ইত্যাদি দিয়ে খাওয়া হয়। কালায়ের রুটির সাধারন দাম ২৫ টাকা তবে কোনো জায়গায় বিশেষভাবে বানানো রুটিগুলো দাম একটু বেশি নেই। রাজশাহীর বেশ কিছু জায়গায় এ রুটি পাওয়া যায়। তবে রাজশাহীর নিউমার্কেটের রুপালি ব্যাংকের উল্টাদিকে কালাই হাউজ’, সেখানকার রুটি বেশ জনপ্রিয়।
বাটার মোড়ের জিলাপি: রাজশাহী শহরের বিখ্যাত খাবারের তালিকায় আসে বাটার মোড়ের জিলাপি। এ জিলাপির স্বাদের কথা মুখে বলা ভার। রাজশাহীর সাহেব বাজার গণকপাড়া থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে বাটার মোড়ের জিলাপির দোকান। সুস্বাদু এই রসালো জিলাপির মুল্য প্রতি কেজি ২০০ টাকা।
রাজশাহীর কালাভুনা: দেশের প্রায় বিভিন্ন স্থানে এই খাবারের নাম শুনতে পাওয়া যায়। তবে রাজশাহীর কাটাখালি জায়গার কালাভুনার স্বাদ একেবারেই আলাদা। রাজশাহীতে বিভিন্ন জায়গায় কালাভুনার দোকান আছে, তবে একতা হোটেলের কালাভুনা বেশ জনপ্রিয় লোকমুখে শোনা যায়। কালাভুনার দাম প্রতি বাটির ১৬০ টাকা সেখানে ১০ পিস মাংস দেওয়া হয়।
বট পরোটা: বট অর্থাৎ আমরা গরুর ভুড়ি বলে চিনে থাকি। অনেকের বেশ পচ্ছন্দের একটি খাবার, সেটা যদি রাজশাহীর হয় তাহলে তো কোনো কথায় নেই। রাজশাহীর গরম গরম পরোটার সাথে বটের স্বাদ আরও আলাদা। শহরের বিভিন্ন স্থানের হোটেল গুলোতে এ খাবার পাওয়া যায়। তবে তালাইমারির জামিলের দোকান বেশ জনপ্রিয়। এই বট পরোটা প্রতি ফুল বাটি ৮০ টাকা।
ফুল তলার টটপটি: চটপটি আমরা প্রায় অনেকেই পচ্ছন্দ করি, এটি মটর এবং বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রনে তৈরি করা হয়। রাজশাহী শহরে বেশ জনপ্রিয় এই খাবারটি। পদ্মা নদীর পারে ফুলতলায় এই চটপটি পেয়ে যাবেন। এই চটপটির মূল্য প্রতি বাটি ১৫ থেকে ২০ টাকা হয়ে থাকে।
এছারাও রয়েছে বিদুৎ হোটেলের শিক কাবাক, লুচি ও আলুর দম, বার্গার, সোনাদিঘির মোড়ের লেবু চা, নিউমার্কেটের নূরের হালিম, বেলদার পাড়ার ফুচকা বেশ জনপ্রিয়। সকল খাবারের স্বাদ অনন্যা। তাই আপনারা রাজশাহী আসলে এ খাবার গুলো মিস করবেন না।
রাজশাহীর বিখ্যাত মিষ্টি
সৌন্দর্যের এই শহরে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি, বিভিন্ন নামের মিষ্টি পাবেন। রাজশাহীর সবথেকে বিখ্যাত মিষ্টি হলো সি এন্ড বি মোড়ের মিষ্টি। এখানে মিষ্টি গরম গরম তৈরি করে পরিবেশন করা হয়। এই মিষ্টি ছাড়াও রাজশাহী শহরে আরও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়।
রাজশাহীর প্রায় বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি পাওয়া যায়, তবে জনপ্রিয় হলো রাজশাহী মিষ্টান্ন ভান্ডার, নবরূপ, বেলিফুল,মিষ্টিবাড়ি ও মিষ্টিমহল।
রাজশাহীর জনপ্রিয় মিষ্টির মধ্যে রয়েছে রসকদম। রাজশাহীতে প্রথম রসকদম মিষ্টি তৈরি করা হয়েছিল। কদম ফুলের মতোই প্রায় দেখতে এই মিষ্টি। রাজশাহী মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসকদম বেশি জনপ্রিয়।
রাজশাহীর মিষ্টি গুলোর মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় মিষ্টি হলো কমলাভোগ। কমলার স্বাদে তৈরি করা হয় এই মিষ্টি। রাজশাহী বিখ্যাত মিষ্টির তালিকা আসলেই এই মিষ্টির নাম চলে আসে।
রাজশাহীর নবরূপ মিষ্টান্ন ভান্ডারের ছানার কালোজাম সবার প্রিয় একটি মিষ্টি। সাহেব বাজারে এই মিষ্টির দোকান রয়েছে। ছানা, ময়দা, মাওয়া, চিনি, ঘি ও গোলাপজলের মিশ্রনে এই মিষ্টি তৈরি করা হয়। এ মিষ্টির মূল্য প্রতি কেজি ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
রাজশাহীর আরও একটি বিখ্যাত মিষ্টি হলো হোবা ঘোষের মিষ্টি। চার প্রজন্ম থেকে এই মিষ্টি হয়ে আসছে এবং লোকমুখে বেশ জনপ্রিয় এই মিষ্টি। এখানে দুই ধরনের মিষ্টি বেশ জনপ্রিয়, সাদা এবং লাল রঙের মিষ্টি দুটি। দুধ ছানা ও চিনির মিশ্রনে তৈরি করা হয় এই মিষ্টিগুলো। এই মিষ্টিগুলো পাউরুটি দিয়েই সচারচর খাওয়া হয়। প্রতি কেজির দাম ২০০ টাকা।
শামীম সুইটসের রসগোল্লাও রাজশাহীর বেশ জনপ্রিয় একটি মিষ্টি। এর মূল্য কেজিতে ৩৫০ টাকা।
এসব মিষ্টি ছাড়াও বিভিন্ন স্বাদের আরও হরেক রকমের মিষ্টি রয়েছে। এসব মিষ্টির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্ষীরভোড়, দধিসর, রসগোল্লা, রাজভোগ, লবংগ, ছানার জিলাপি ইত্যাদি। রাজশাহী শহর একটা মনোমুগ্ধকর শান্তির একটা শহর। সকল মানুষকে আকৃষ্ট করে নেই, দুর দুরান্ত থেকে মানুষ এখানে ঘুরতে আসে।
লেখকের শেষ বক্তব্য
রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার - রাজশাহীর বিখ্যাত মিষ্টি সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার - রাজশাহীর বিখ্যাত মিষ্টি সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।